ব্লাড সুগার কত থাকা উচিত ?

 

ব্লাড সুগার: কত থাকা উচিত এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ

ভূমিকা

ব্লাড সুগার বা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এটি আমাদের দেহের শক্তি উৎস হিসাবে কাজ করে এবং স্বাভাবিক শরীরিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সহায়তা করে। তবে, রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তা হলে তা স্বাস্থ্যগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা ব্লাড সুগার কত থাকা উচিত এবং এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানব।


ব্লাড সুগারের স্বাভাবিক মাত্রা

1. খালি পেটে ব্লাড সুগার:

  • সাধারণ মানুষ: ৭০ থেকে ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার (mg/dL)।
  • প্রি-ডায়াবেটিক: ১০০ থেকে ১২৫ mg/dL।
  • ডায়াবেটিক: ১২৬ mg/dL বা তার বেশি।

2. খাবার খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে ব্লাড সুগার:

  • সাধারণ মানুষ: ৭০ থেকে ১৪০ mg/dL।
  • প্রি-ডায়াবেটিক: ১৪০ থেকে ১৯৯ mg/dL।
  • ডায়াবেটিক: ২০০ mg/dL বা তার বেশি।

3. HbA1c (তিন মাসের গড় ব্লাড সুগার):

  • সাধারণ মানুষ: ৫.৭% বা তার কম।
  • প্রি-ডায়াবেটিক: ৫.৭% থেকে ৬.৪%।
  • ডায়াবেটিক: ৬.৫% বা তার বেশি।

ব্লাড সুগারের গুরুত্ব

  1. শক্তির উৎস: ব্লাড সুগার হল শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। এটি আমাদের মস্তিষ্ক, পেশি এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কাজ করতে সহায়তা করে।

  2. বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়: রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকলে, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিডনি সমস্যার ঝুঁকি কমে যায়।

  3. শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণ: ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে, ইনসুলিন এবং অন্যান্য হরমোনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক থাকে। এর ফলে শরীরের মেটাবলিক ফাংশন ঠিকঠাক থাকে।

  4. শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য: ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকলে, শারীরিক স্বাস্থ্য যেমন ঠিক থাকে, তেমনি মানসিক স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক।


ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণের উপায়

  1. সুষম খাদ্যাভ্যাস: খাবারে শর্করা, প্রোটিন, এবং ফ্যাটের সুষম মিশ্রণ থাকা উচিত। খাবারে সবজি, ফল, এবং ফাইবার বেশি রাখুন।

  2. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের ব্যায়াম ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হাটা, সাইক্লিং, বা সাঁতার কাটার মত ব্যায়াম বেছে নিন।

  3. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করে ব্লাড সুগার মনিটর করুন। HbA1c পরীক্ষা করে তিন মাসের গড় ব্লাড সুগার পর্যবেক্ষণ করুন।

  4. ওজন নিয়ন্ত্রণ: অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওজন কমাতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং ব্যায়াম করা জরুরি।

  5. পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। দৈনিক ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমাতে চেষ্টা করুন।

  6. স্ট্রেস কমানো: স্ট্রেস কমাতে যোগব্যায়াম, মেডিটেশন, বা মনোরম কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত রাখুন। স্ট্রেস ব্লাড সুগার বাড়াতে পারে।


উপসংহার

ব্লাড সুগার আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সঠিক মাত্রায় ব্লাড সুগার বজায় রাখা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত পরীক্ষা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারার মাধ্যমে আপনি আপনার ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন এবং দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমাতে পারেন।


Unique Code wait
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url